রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে জিসানুল ইসলাম নামে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার হয় দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। পরে বাসায় ফিরে গত ৩ জুন ভোরে চট্টগ্রামের বায়েজিদ নগর, ড্রিমল্যান্ড আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অভিমানে আত্মহত্যা করে মেয়েটি। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারকৃত দুইজন হলেন- রুবেল (১৯) ও জিসানুল ইসলাম (২০)। তাদেরকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (০৮ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।
তিনি বলেন, আমরা গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রাম থেকে এক বান্ধবীকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়ে টমটম চালক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় এক তরুণী।
গত ৩ জুন ভোরে সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন বায়েজিদ নগর, ড্রিমল্যান্ড আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো ওই শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
মুক্তা ধর বলেন, ওই তরুণীর বন্ধু জিসান সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় ফুলকলি মিষ্টির কারখানায় কাজ করত। ওই তরুণীর সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাদে এক বছর যাবৎ তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে জিসানুল ইসলাম আরও বেশি বেতনে কক্সবাজারে চাকরি পাওয়ায় নতুন কর্মস্থলে চলে যায়। তাদের দুই জনের মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল।
এক পর্যায়ে বন্ধু জিসানের আমন্ত্রণে গত ৩১ মে ওই তরুণী তার এক বান্ধুবীকে নিয়ে কক্সবাজার যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারে তার বন্ধু জিসান ব্যস্ত, দেখা করতে পারবে না। পরবর্তীতে জিসান তার তিনজন বন্ধুকে ওই তরুণীর কাছে পাঠায়। কিন্তু ওই তরুণী জিসানের তিন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করে। তখন ওই তরুণীকে চট্টগ্রাম ফিরে যেতে বলে জিসান।
মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ওই তরুণী ও তার বান্ধবী একটি টমটম নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যায় চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য। তখন টমটম চালক রুবেল ওই তরুণীর কাছ থেকে ঘটনা জানার পর তাকে আশ্বস্ত করে যে, জিসান তার পূর্ব পরিচিত। তাকে সময় দিলে সে যেভাবেই হোক জিসানের সঙ্গে তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিবে।
টমটম চালক রুবেলের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ওই তরুণী সরলমনে তা বিশ্বাস করে। রুবেল ওই তরুণীর বান্ধবীকে তখন একটি চট্টগ্রামগামী বাসে তুলে দেয়। জিসানকে খুঁজে বের করার অভিনয় করে রুবেল ওই তরুণীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে কালক্ষেপণ করে। জিসানকে খবর দেওয়া হয়েছে এবং সে রাতের বেলা এসে জিসানের পরিচিত ৬ নং ঘাটের পার্শ্ববর্তী ‘হোটেল আলামিন’ এ এসে ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করবে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হোটেলে নিয়ে যায়।
রাতের বেলা জিসান এসেছে বলে রুবেল হোটেলের রুমের দরজা খোলার জন্য বলে। ওই তরুণী দরজা খুলে দিলে রুবেল হোটেল রুমে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে কৌশলে পালিয়ে যায়।
নিরুপায় তরুণী পরদিন রাতে চট্টগ্রাম বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন তাদের বাসায় ফিরে যায়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই তরুণী রাগে অভিমানে ৩ জুন আত্মহত্যা করে।
ওই আত্মহত্যার ঘটনায় তরুণীর বোন জিসানুল ইসলাম (২০) ও টমটম চালক রুবেল (১৯) এর বিরুদ্ধে সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামি থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।